সৈয়দ মহসিন আলী - সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী আর নেই

সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী আর নেই  :    

সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আজ সোমবার সকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবীর প্রথম আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতা শোক প্রকাশ করেছেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সৈয়দ মহসিন আলীকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
নিউমোনিয়া ও কিডনির সমস্যাসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন মহসিন আলী। ওই হাসপাতালে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা চলাকালে ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন মন্ত্রী। এরপর থেকে তাঁকে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস (মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন) দেওয়া হচ্ছিল। পরদিন তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
সৈয়দ মহসিন আলী এমপি একজন খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও রয়েছে তাঁর ব্যাপক হিসেবে পরিচিতি। তিনি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭-মৌলভীবাজার-৩ আসন হতে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং একই দিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 



জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গণে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ২৩ বছর বয়সে তিনি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধকালীন সিলেট বিভাগ সি.এন.সি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে সম্মুখযুদ্ধে নিষ্ঠার সাথে নেতৃত্ব প্রদান করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্মুখসমরে আহত হয়েও তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বাংলদেশকে শত্রুমুক্ত করতে সাহসী বীরের ভূমিকা রাখেন।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি  সিলেট জেলা ও বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দ মহসিন আলী এমপি মৌলভীবাজার পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা/জেলা রেডক্রিসেন্ট এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি এবং মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্বও পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি তাঁকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক-২০১৪’ প্রদান করে এবং ‘হ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাঁকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা-২০১৪’ পুরস্কারে ভূষিত করে।

সৈয়দ মহসিন আলী এমপি ভারতের কলকাতা থেকে এমবিএ ডিগ্রি প্রাপ্ত। তিনি মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের আওতায় দেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে পরিবার পরিকল্পনা ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি বাংলা, ইংরেজী, উর্দু ও হিন্দী ভাষায় বলা ও লেখায় সুদক্ষ। সৈয়দ মহসিন আলী সরকারী ও ব্যক্তিগত সফরে ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি ভ্রমণ করেছেন। 

সৈয়দ মহসিন আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক ও জনদরদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত। সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তিনি বিভিন্নভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তাঁর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আজ বহু অসহায় মানুষ দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। 

সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সড়কের ‘দর্জি মহল’ এ এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আশরাফ আলী এবং মাতা আছকিরুন্নেছা খানম। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ মহসিন আলী বিবাহিত এবং তিন কন্যা সন্তানের জনক। তিনি একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব। তাঁর সঙ্গীত প্রীতি সর্বজনবিদীত। খেলাধুলা, সংগীত, বইপড়া ও শরীরচর্চা তাঁর প্রিয় শখ।